স্বস্তি ফিরছে অর্থনীতিতে
আমদানি খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল, সরকারের নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে তা কমে এসেছে।

অন্যদিকে বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচক রিজার্ভের প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও ইতিবাচকভাবে বেড়েছে। সব মিলিয়ে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে বৈদেশিক বাণিজ্যে। কমতে শুরু করেছে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ঘাটতি। বাণিজ্য ঘাটতিও কমছে।
গত সোমবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ব্যালান্স অব পেমেন্টে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন (৫০৩ কোটি ৭০ লাখ) ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল দ্বিগুণেরও বেশি, ১০ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছিল অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল ঘাটতি নিয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই কোনো অর্থবছরে ব্যালান্স অব পেমেন্টে এত ঘাটতি দেখা যায়নি। তার আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে এই সূচকে ৪ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের আগস্ট থেকে আমদানি ব্যয় বাড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শেষ হয় অর্থবছর। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমেছিল ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। সে কারণেই ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি বেড়ে গিয়েছিলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এই সাত মাসে বাংলাদেশ রপ্তানির চেয়ে ১৩.৩৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি করেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই সাত মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ এর চেয়ে অনেকটাই বেশি ছিল, ১৮.৮১ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছরের প্রথমার্থে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কমেছে ২৯ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৪৪ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই সাত মাসে ৪৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। অন্যদিকে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি। গত বছরের এই সাত মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ২৭ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল।
২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলো প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম। তবে এই অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। নভেম্বর থেকে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে। নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ডিসেম্বরেও বেড়েছে, ১৭০ কোটি ডলার এসেছে। সর্বশেষ জানুয়ারিতে এসেছে আরও বেশি ১৯৬ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার দেশে এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।